বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে স্কাইপে রেখেই বৈঠকে বসেছিলেন দলের ক্ষুব্ধ স্থায়ী কমিটির নেতারা। দেড় মাস পর গতকাল শনিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন তারা। দুই ঘন্টা ব্যপ্তি বৈঠকটিতে ৫টি ইস্যু নিয়ে আলোচনার পর কোনো সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই তা শেষ হয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল শেষ হয়ে গেলেও আগামী শনিবার আবার বসবে স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক। ওইদিন নেতাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে কী করতে হবে বিষয়ে হোম ওয়ার্ক করে আসতে বলা হয়েছে।
advertisement
স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর কারাবন্দি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলা ও তার জামিন বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে আইনি পরামর্শ করেন নেতারা।
বৈঠকে অংশ নেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের বিজয়ীরা গত ২৯ এপ্রিল তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে শপথ নেন। কিন্তু দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল শপথ না নেওয়ার। এই ঘটনায় প্রকাশ্যে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থায়ী কমিটির কয়েক নেতা। তাদের ক্ষুব্ধতা এতটাই ছিল যে ৪মে বৈঠক ডাকলেও স্থায়ী কমিটির কয়েক নেতা তা বর্জন করার ঘোষণা দিলে কয়েক ঘন্টার মাথায় তা বাতিল করা হয়।
এরপর আর কোনো স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়নি। উল্লেখ্য, সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছিল ২৮ এপ্রিল রাতে। ওই বৈঠকেই তারেক রহমান স্থায়ী কমিটির নেতাদের কাছ থেকে শপথ নেওয়ার বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত চেয়ে নিয়েছিলেন।
নির্বাচিত চার এমপি শপথ নিলেও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল শপথ নেননি। এই নিয়ে দলের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। গতকাল স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই নিয়েও কথা উঠেছে।
স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, ক্ষুব্ধ নেতাদের মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে সেখানে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক দুই নেতা বলেন, মোশাররফ ও মওদুদ শপথ নেওয়া প্রসঙ্গে কী বলেছেন তা জানাতে ওই দুই নেতাই কোনো মুখ খোলেননি। উভয় নেতাই বলেছেন, সার্বিক বিষয়ে নিয়ে তারা এই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এই মুহুর্তে কী করা যায়-বিশেষ করে, কারাবন্দি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলা ও জামিন, তার স্বাস্থ্য, ও তার মুক্তির দাবিতে কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া যায় এবং দলপুনর্গঠন বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে এক নেতা জানান, তারেক রহমান চার এমপির শপথ নেয়ারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
এদিকে, গত ৩ জুন ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনে এসএসসি ২০০০ সাল থেকে তার নীচের দিকের শিক্ষার্থীদের দিয়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত দেয়। এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে বয়সসীমা তুলে দেয়ার দাবিতে সম্প্রতি দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব অসুস্থ রুহুল কবির রিজভীকে ভেতরে রেখে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন বন্ধ করে দিনভর বিক্ষোভ করে। এতে চরম ক্ষুব্ধ হন তারেক রহমান।
স্থায়ী কমিটির নেতাদের তিনি বলে দিয়েছেন, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এই নিয়ে কাজ করছেন। তারাই সমাধান করবেন। যদিও সাবেক ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধেই আন্দোলনরতদের ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে গতকালের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই নিয়ে কথা উঠলেও তা বেশিদূর এগোয়নি বলে জানা গেছে।
তবে স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করার মধ্যদিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একটি সারাদেশের নেতাকর্মীদের একটি বার্তা দিয়েছেন। কাজ না করে শুধু শুধু কমিটিতে পদ-পদবী নিয়ে আছেন তাদের বিষয়ে একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এবং সামনের সব কমিটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে হবে; এই বার্তা দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এদিকে বয়সসীমা না করে ধারাবাহিক কমিটির দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে আজ ফের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণ দিয়েছে ছাত্রদলের সদ্য সাবেক নেতারা। আজ রোববার সকাল ১১টা থেকে তারা শান্তিপূর্ণভাবে এই কর্মসূচি পালন করবেন।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবির বলেন, ‘সার্চ কমিটিসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা তাদের ওপর আস্থা রাখার কথা বলেছিলেন। যে কারণে আমরা কর্মসূচি স্থগিত করেছিলাম। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত আমাদের দাবির বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি। তাই আমরা আজ নয়াপল্টন কার্যালয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’